মার্চে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রাকে অতিক্রম করেছে
চলতি বছরের মার্চে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়ে ১০.৪৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণের গ্রোথ বা প্রবৃদ্ধি ছিল ৯.৯৬ শতাংশ; অর্থাৎ, মার্চে যা ফেব্রুয়ারির তুলনায় ০.৫৩ বেসিস পয়েন্ট বেড়েছে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ১০ শতাংশ। তবে প্রথম দুইমাস লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকলেও মার্চে ঋণের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার বেশি হয়েছে।
রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমদানি ও ব্যবসায়িক লেনদেন বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি ঋণ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক টিবিএসকে বলেন, "বাংলাদেশ ব্যাংকের গত দুই বারের মুদ্রানীতি কন্ট্রাকশনারি করা করেছে। এর ফলে সকল ধরনের ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিও কম ছিল।"
তিনি বলেন, "মার্চে রমজানের কারণে খাদ্য পণ্য আমদানি বেড়েছে। এছাড়া রমজানের ঈদকে সামনে রেখে গ্রাহক পর্যায়ে কনজ্যুমার লোনের পরিমাণও বেড়েছে। সর্বপরি এসব কারণে বেসরকারি খাতের ঋণের গ্রোথ কিছুটা বেড়েছে।"
তবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, "ঈদ কেন্দ্রীক ঋণের গ্রোথ বাড়লেও পরের এপ্রিলে এসে কিছুটা কমেছে। কারণ এখন দেশের অর্থনীতি ও বৈশ্বিক বাজারে মন্থর গতি চলছে, এ কারণে ব্যবসায়ীরা নতুন করে ব্যবসা সম্প্রসারণ কম করছেন।"
তিনি বলেন, "ঋণের সুদহার গত জুলাই থেকে ৯ টাকা থেকে প্রতিমাসে প্রায় এক টাকা করে বেড়ে এখন প্রায় ১৪ টাকা হয়েছে। সুদহার বেড়ে যাওয়ার কারণে, এছাড়া ঘোষিত ডলারের রেটের তুলনায় আমদানি নিষ্পত্তির রেট বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আমদানি কম করছেন, যার কারণে গত কয়েকমাসে বেসরকারি ঋণ বেশি ছিল।"
যদিও ঈদের মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও ঈদ সামগ্রী কেন্দ্রীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
২০২৩ সালের মার্চে আমদানি এলসি খোলার পরিমাণ ৬ বিলিয়ন ডলারের কম হয়েছে। গত এক বছরে কেবল তিনবার আমদানি এলসি ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, ডলার সংকট অব্যাহত থাকলেও সম্প্রতি পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
তিনি বলেন, "সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রপ্তানির পরিমাণ মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহও শক্তিশালী হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাংকিং খাতে ডলারের তারল্য পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়েছে। ফলে আগে যেসব পণ্যের এলসি খোলা হচ্ছিল না, ব্যাংকগুলো এখন সেসব পণ্যের আমদানি এলসি খোলার বিষয়ও বিবেচনা করছে।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২.৬২ শতাংশ। এরপর থেকে টানা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে। তবে অক্টোবরে কিছুটা বেড়ে ১০.০৯ শতাংশ হয়েছিল; এরপর ফের নভেম্বরে কমে যায়। যদিও ডিসেম্বরে নভেম্বরের তুলনায় মার্জিনাল গ্রোথ হয়েছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার কম প্রবৃদ্ধি ছিল। মার্চে এসে তা বেড়েছে। ঋণের সুদহার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ও কন্ট্রাকশনারি মনিটরি পলিসির প্রভাবে এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
চলমান মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব ধরনের অর্থ সরবরাহ বা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে। বেসরকারি খাতের ঋণ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা জুনের জন্য কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ১১ শতাংশ। এছাড়া, সর্বোপরি অর্থ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯.৭ শতাংশ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, আগামী জুনে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে না আনা পর্যন্ত তার কন্ট্রাকশনারি মনিটারি পলিসি অব্যাহত থাকবে। যদিও সর্বশেষ প্রকাশিত বিবিএস এর রিপোর্টে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি রয়েছে ৯.৮১ শতাংশ।
কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, মার্কেটে বেসরকারি খাতের ঋণের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, তার তুলনায় প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম। কারণ অনেক ব্যাংকের তারল্য সংকট রয়েছে। এছাড়া, গত দেড় বছর ধরে দেশের আমদানির প্রবৃদ্ধিও কম রয়েছে।