জিরো থেকে হিরো: বতসোয়ানার সেরা চাষী বাংলাদেশের ইলিয়াস
বরিশালের আগৈলঝড়ার ছেলে মোস্তফা গিয়াসউদ্দিন ইলিয়াস যখন বতসোয়ানায় পাড়ি দিয়েছিলেন তখন কৃষি বিষয়ে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না। ক্ষেতে-খামারে কখনও কাজও করেননি। সেই মানুষটিই কিনা বতসোয়ানার লোবাস্তে নামের ছোট্ট শহরে গিয়ে হাজির হলেন বোনজামাইকে কৃষিকাজে সহযোগিতা করতে।
সেটা ১৯৯৬ সালের ঘটনা। এখন ৫৪ বছর বয়সের ইলিয়াস সে দেশের রাজধানী গাবোরনের শহরতলীতে ১০ একর জমিতে গড়ে তুলেছেন নিজের বিশাল খামার।
কিন্তু এতখানি পথ পেরুনো অত সহজ বিষয় ছিল না তখনকার সেই শৌখিন চাষীর জন্য। বিশেষ করে যে দেশের ভূমি আধা-মরুময়, আবহাওয়া বড়ই রুক্ষ্ণ আর পানির যে সেখানে বড় অভাব। কঠোর পরিশ্রম আর দৃঢ়সংকল্পই তাঁকে সবশেষে জয়ী হতে সাহায্য করেছে।
এখন ইলিয়াসের ঝুলিতে ১১টা পুরস্কার। এর মধ্যে দুটো আবার প্রথম পুরস্কার। বতসোয়ানার কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় কৃষি প্রদর্শনী থেকে এ দুটো পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। উন্নত জাতের ফুলকপি ও মুলা উৎপাদনের জন্য পুরস্কারগুলো পেয়েছিলেন ইলিয়াস। তাছাড়া জেলা পর্যায়ে নিজের কাজের জন্য আরও নানা পুরস্কার ও সম্মাননাও পেয়েছেন।
“আমার খামারে স্থানীয়দের ১৫ জনকে নিয়োগ দিয়েছি। ওরা এতে খুব খুশি। ওখানে কৃষিকাজ করলে সম্মান, মর্যাদা, অর্থ সবই পাওয়া যায়— বাংলাদেশের মতো নয়। কঠোর পরিশ্রমের সম্মান পেয়েছি বলে আমি খুবই খুশি”, বললেন ইলিয়াস।
রোজ তিনি এক টন সবজির আবাদ করেন আর সেসব চলে যায় রাজধানীর নানা সুপার মার্কেটে। দৈনিক আয় তাঁর ৫০০ ডলার। তাতে মাসে তাঁর যে আয় হয় সেটা বতসোয়ানার মাসিক ন্যূনতম মজুরি ১০০ ডলারের দেড়শ গুণ।
দুটো মৌসুমে তিনি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করেন। শীতে ফুলকপি, ব্রকোলি, বাঁধাকপি, বিট-পালং, লালশাক, মুলা আর পেঁয়াজকলি। গরমের সময় নানা ধরনের বিন, বাটারনাট (এক ধরনের মিষ্টি কুমড়া) ও মরিচ।
কৃষিশিল্পে ইদানিং তাঁর সাফল্যের ঝুড়ি ভারি হচ্ছে বলেই ইলিয়াস সবজি আবাদের বাইরে নতুন কিছুর পরিকল্পনা করছেন, মাছ উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছেন তিনি। বতসোয়ানার চারপাশে কোনো সমুদ্র নেই বলে জলের অভাবে সেখানে মাছের আবাদ বিরল ঘটনা।
দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু জায়গায় খানিকটা মাছ-চাষ হয়। ইলিয়াস কিন্তু থামতে চান না। ইতোমধ্যে নিজের খামারে ৮ হাজার বর্গফুটের পুকুর খুঁড়ে ফেলেছেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টির জল পেলেই কাজ শুরু করবেন।
আগৈলঝড়ায় জন্ম নেওয়া বতসোয়ানার ওই কৃষি-উদ্যোক্তা যেভাবে দৃঢ়চিত্ততা দিয়ে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তাতে বোঝা যায়, আগামীতে তাঁর সঙ্গে কথা হলে আরও নতুন কিছু সাফল্যের গল্প শোনা যাবে; জানা যাবে আরও অনেক পুরস্কার পাওয়ার কথাও।