যেসব কারণে বার্সা ছাড়তে চান মেসি
ফুটবল ক্লাব বার্সোলোনার সমার্থক শব্দ কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে লিওনেল মেসির নাম বললে নিশ্চয়ই ভুল হবে না। মেসি ও বার্সা মিলেমিশে একাকার, রসায়ণটা বহুদিনের। মেসির ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত একটিই নাম, বার্সেলোনা। সেই ছোটবেলায় যে ন্যু ক্যাম্পে গিয়েছেন, আর ছাড়ার কথা ভাবেননি।
অনেকেরই ধারণা ছিল, বার্সাতেই ক্যারিয়ার শেষ করবেন মেসি। কৃতজ্ঞ মেসিও বিভিন্ন সময়ে বার্সাতেই ক্যারিয়ার শেষ করার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু হঠাৎই সব উত্তাল হয়ে পড়েছে। বুরোফ্যাক্স করে দল ছাড়ার কথা বার্সাকে জানিয়ে দিয়েছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
মেসি যে বার্সায় থাকতে চান না, এমন গুঞ্জন বেশ পুরনো। মেসি বার্সা ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানোয় এটা এখন আর গুঞ্জন নয়। কিন্তু হঠাৎ কী এমন হয়েছে যে, বার্সা ছাড়তে এভাবে উঠেপড়ে লেগেছেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার?
হঠাৎ সিদ্ধান্ত জানালেও মেসির বার্সা ছাড়ার ব্যাপারটি আচমকা কিছু নয়। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্লাব কর্তৃপক্ষের ওপর নাখোশ মেসি। বার্সা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয় আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকরকে সাহায্যই করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি অন্যতম কারণ উল্লেখ করা হলো।
নেইমারকে ফিরিয়ে না আনা
২০১৩ সালে সান্তোস থেকে বার্সেলোনায় পাড়ি জমান নেইমার। তরুণ নেইমারকে সাদরেই গ্রহণ করে নেন মেসি। খুব দ্রুতই তাদের মধ্যে দারুণ বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এভাবে গিয়েছে চারটি মৌসুম। ২০১৭ সালে গিয়ে বার্সা ছেড়ে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইতে (পিএসজি) যোগ দেন নেইমার। মেসির ছায়া থেকে বেরোতেই এমন সিদ্ধান্ত নেন ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ড।
সিদ্ধান্তটা যে ঠিক ছিল না, বুঝতে দেরি হয়নি তার। আবার বার্সায় ফেরার ইচ্ছার কথা জানান নেইমার। মেসিও খুব করে চেয়েছেন, নেইমার যেন বার্সায় ফিরে আসেন। কিন্তু এতে বার্সার তেমন সায় ছিল না। শুধু মেসিকে সন্তুষ্ট করতে কয়েক দফায় চেষ্টা করে বার্সা। তবে খেলোয়াড় বিনিময় করে নেইমারকে ফেরানোর চেষ্টা করে তারা। বার্সার এই চেষ্টা সফল হয়নি। তখন থেকেই বার্সার ওপর নাখোশ মেসি।
গ্রিজম্যানকে দলে ভেড়ানো
নেইমারকে না ফিরিয়ে আতোঁয়ান গ্রিজম্যানকে কেনার বিষয়টি মেসির কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। ২০১৮ সালে নেইমারকে দলে ফেরাতে না পারলেও পরের বছর সুযোগ এসেছিল। কিন্তু নেইমারের দিকে নজর না দিয়ে গ্রিজম্যানকে উড়িয়ে নিয়ে আসে বার্সেলোনা। শুরুতে নাখোশ থাকলেও গ্রিজম্যানকে নিয়েই লড়াইয়ে নামেন মেসি। কিন্তু গত মৌসুমে গ্রিজম্যানের অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্সে পুরনো হতাশা নতুন করে বাসা বাঁধে মেসির মনে।
আরনেস্তো ভালভার্দেকে বরখাস্ত করা
মেসির মন খারাপের আরেকটি কারণ আরনেস্তো ভালভার্দেকে বরখাস্ত করা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দুই মৌসুমে রোমা ও লিভারপুলের বিপক্ষে প্রথম লেগে এগিয়ে থাকার পরও বার্সার ভরাডুবি হয়। অ্যানফিল্ডে বার্সার অসহায় আত্মসমর্পণের পর ভালভার্দেকে ছেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে বার্সা। গত জানুয়ারিতে তাকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় কিকে সেতিয়েনকে।
ভালভার্দেকে এভাবে বরখাস্ত করার ব্যাপারটিও ভালো লাগেনি মেসির। বার্সা ভরসা না পেলেও আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের অন্যতম পছন্দের কোচ ছিলেন ভালভার্দে। কিন্তু ভালভার্দেকে সরিয়ে সেতিয়েনকে কোচ বানায় কাতালান ক্লাবটি। অথচ সেতিয়েন কখনই মেসির সংস্পর্শে ছিলেন না। মেসির বিগড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণের মধ্যে এটি একটি।
এরিক আবিদালকে বোর্ডের সমর্থন
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দুটি আসর থেকে বাজেভাবে বিদায় নেওয়ায় খেলোয়াড়দের ওপর দোষ চাপান বার্সেলোনার স্পোর্টিং ডিরেক্টর এরিক আবিদাল। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের দায়িত্বহীনতার কারণেই দল সাফল্য পায়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি। সাবেক সতীর্থ আবিদালের এমন মন্তব্যে রীতিমতো খেপে যান মেসি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবিদালকে এক প্রকার ধুয়ে দেন মেসি। খেলোয়াড়রা যে ইচ্ছা করে খারাপ খেলেছেন, আবিদালের কাছে প্রমাণ চান মেসি। গুরুতর অভিযোগ হলেও বার্সা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেয়নি। এ নিয়ে আবিদালকে কোনো প্রশ্নও করা হয়নি। যা তাঁতিয়ে দেয় মেসিকে।
এক ফোন কলে সুয়ারেজকে বিদায় বলে দেওয়া
কিকে সেতিয়েন যে বার্সার কোচ হিসেবে থাকছেন না, তা আগেই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ৮-২ গোলের বিশাল হারের পর সেতিয়েনের চূড়ান্ত বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায়। মেসিদের পছন্দের কোচের তালিকায় যে কজন কোচ ছিলেন, তার মধ্যে ছিলেন না রোনাল্ড কোম্যান।
ডাচ এই কোচ দায়িত্ব নেওয়ার পরই মেসির বার্সা ছাড়ার গুঞ্জন চাউর হয়। কোম্যানও দায়িত্ব নিয়েই আগুনে ঘি ঢালেন। ফোন করে লুইস সুয়ারেজকে অন্য ক্লাব খোঁজার কথা জানিয়ে দেন তিনি। এ ছাড়া সিনিয়র আরও কয়েকজন ফুটবলারকে সতর্কবার্তা দেন কোম্যান। যা মেনে নেওয়া সহজ ছিল না মেসির জন্য।
মেসি-কোম্যান লড়াই
দলের অন্যান্য সিনিয়র ক্রিকেটারকে সাবধান করেই থামেননি কোম্যান। মেসির সঙ্গেও কড়া ভাষায় কথা বলেছেন নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের দায়িত্ব ছেড়ে বার্সার কোচ হওয়া কোম্যান। মেসিকে তিনি জানিয়ে দেন, সব খেলোয়াড়ের জন্য তার একই পরিকল্পনা। বাড়তি কোনো সুবিধা আর মেসিকে দেওয়া হবে না। কোম্যানের এই বিষয়টিই মূলত মেসিকে চূড়ান্তভাবে বিক্ষিপ্ত করে দেয়। এরপরই বার্সা ছাড়ার কথা জানিয়ে দেন আর্জেন্টাইন এই তারকা।