নতুন রেকর্ড বিটকয়েনের, দাম ছাড়াল ১ লাখ ৬ হাজার ডলার
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিটকয়েনের মূল্যবৃদ্ধি যেন থামছেই না। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গতকাল (রবিবার) বিটকয়েনের দাম ১ লাখ ৬ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। খবর বিবিসির।
তবে রবিবার বিটকয়েনের নতুন রেকর্ড গড়ার পর দাম কিছুটা কমেছে। আজ (সোমবার) সকালে এশিয়ার বাজারে বিটকয়েনের দাম ১,০৪,৫০০ ডলারে নেমে আসে।
গত ৫ নভেম্বর মার্কিন নির্বাচনের দিন থেকে ভার্চুয়াল মুদ্রাটির দাম বেড়েছে ৫০ ভাগ। সেই সঙ্গে চলতি বছরের প্রথম ভাগের তুলনায় বিটকয়েনের দাম দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।
বিটকয়েনের মূল্য কোথায় গিয়ে থামবে, সেটি আন্দাজ করা কঠিন। তবে গত বৃহস্পতিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত তেল রিজার্ভের মতো ডিজিটাল মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তুলবেন তিনি।
বিটকয়েনের দাম ১,৬০,০০০ ডলারে ওঠার পেছনে ইন্ধন যুগিয়েছে ট্রাম্পের ওয়াল স্ট্রিটের নিয়ন্ত্রক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক কমিশনার পল অ্যাটকিন্সের নাম ঘোষণা করা। অ্যাটকিন্স ক্রিপ্টোকারেন্সিবান্ধব হিসেবে পরিচিত।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তা ও পেপলের সাবেক নির্বাহী ডেভিড স্যাক্সকে ক্রিপ্টোমুদ্রা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। স্যাক্স শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের বেশ ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
২০২১ সালেও ডোনাল্ড ট্রাম্প বিটকয়েনকে এক ধরনের জালিয়াতি মনে করতেন। এরপর ট্রাম্পের মত পাল্টেছে। এবারের নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিতে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের ক্রিপ্টোকারেন্সির রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেছেন।
এদিকে গত মিসে এসইসির বর্তমান প্রধান গ্যারি জেন্সলার বলেছেন, ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প যেদিন শপথ নেবেন, সেদিন তিনি পদত্যাগ করবেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, 'আমার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ধন্যবাদ; এই পদে থাকাকালে এসইসি ভয়ভীতি ছাড়াই আইন প্রয়োগ করেছে।'
এর আগে অবশ্য ট্রাম্প বলেছিলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার পর প্রথম দিনেই তিনি জেন্সলারকে বরখাস্ত করবেন। কারণ আর কিছু নয়, সেটা হলো, জেন্সলার ক্রিপ্টো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।
যুক্তরাজ্যের এক জরিপে দেখা গেছে, এখন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, যেমন শিক্ষক, ব্যাংকার, নার্স ও আইটি পেশাদারেরা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করছেন। ফলে একসময় কারেন্সি যে শুধু প্রযুক্তি জগতের মানুষের বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে মনে করা হতো, সেই ধরাবাঁধা চিত্রটা পাল্টে গেছে। এই শ্রেণির মানুষেরা মনে করছেন, বিপুল পরিমাণে ব্যক্তিগত সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগের সেরা মাধ্যম।
বিটকয়েনের এমন উল্কার গতিতে উত্থান সত্ত্বেও এক গভীর রহস্য অনুদ্ঘাটিত থেকে গেছে। সেটা হলো, এর প্রতিষ্ঠাতা রহস্যময় সাতোশি নাকামোটোর প্রকৃত পরিচয় এখনো কেউ জানেন না।
অনেক মানুষ এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন, যদিও এখন পর্যন্ত কেউ সফল হতে পারেননি। গত অক্টোবরে এই রহস্য নিয়ে এইচবিও চ্যানেলে বড় পরিসরের তথ্যচিত্র প্রচারিত হয়, যেখানে দাবি করা হয়, কানাডার বিটকয়েন বিশেষজ্ঞ পিটার টডই সম্ভবত সাতোশি নাকামোটো। কিন্তু সমস্যা সেই একটি, পিটার টড নিজেই এ দাবি অস্বীকার করেন এবং ক্রিপ্টো দুনিয়ার মানুষেরাও এইচবিওর এই দাবিতে গুরুত্ব দেয়নি।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান