ফ্লাইট বাতিল, নির্ধারিত শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া হচ্ছে না
এক বছরের দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া শেষ করার পর যেসব শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন, তাদের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত একটি মেমো থেকে এ তথ্য জানা গেছে। মেমোটি সংবাদ সংস্থা সিএনএনের হাতে এসে পৌঁছেছে।
গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় বসেই তিনি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র–মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারির পাশাপাশি অভিবাসী বিষয়ে আরও কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণা দেন। এর পরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ওই শরণার্থীদের ফ্লাইট বাতিল করা হলো।
বলা হচ্ছে, এ সিদ্ধান্তের কারণে হাজার হাজার শরণার্থী বিপাকে পড়বেন, যাদের ফ্লাইট আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের উদ্ধৃতি দিয়ে মেমোতে বলা হয়েছে, 'যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীদের সব পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ বাতিল করা হচ্ছে এবং ভ্রমণের জন্য নতুন করে কোনো বুকিং নেওয়া হবে না। রিসেটেলমেন্ট সাপোর্ট সেন্টারের (আরএসসি) এখন থেকে কোনো নতুন শরণার্থীর জন্য ভ্রমণের অনুরোধ জানানো উচিত নয়।'
মেমোতে আরও বলা হয়েছে, 'শরণার্থীদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাগজপত্র প্রক্রিয়া এবং ফ্লাইট পূর্ববর্তী অন্যান্য কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে।
বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ১০ হাজার শরণার্থীর ভ্রমণ বাতিল করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আফগানিস্তান, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ভেনেজুয়েলা, সিরিয়া ও মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক রয়েছেন। তবে কোন দেশের কতজন ছিলেন, তাৎক্ষণিকভাবে সে সংখ্যা জানা যায়নি।
তবে স্পেশাল ইমিগ্র্যান্ট ভিসাধারী (এসআইভি) যারা বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কাজ করেছেন, তারা এ আদেশের আওতামুক্ত। এছাড়া যেসব শরণার্থী ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, তারা নির্ধারিত সেবাগুলো পাবেন।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্যুরো অব পপুলেশন, রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে সিএনএন।
গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের অফিস অব দ্য কোঅর্ডিনেটর ফর আফগান রিলোকেশন ইফোর্টস (সিএআরই) আফগানিস্তান থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের তৃতীয় কোনো দেশ যেমন, পাকিস্তান ও কাতারে পাঠিয়ে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করেছে। এতে এমন আফগানরা অন্তর্ভুক্ত যারা স্পেশাল ইমিগ্র্যান্ট ভিসাধারী নন।
এ পরিস্থিতিতে সরকারের এক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, এসব দেশে যেসব ব্যক্তি স্পেশাল ইমিগ্র্যান্ট ভিসাধারী নন, তারা আসলে ওই সব দেশে যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরিচালিত সাইটগুলোতে 'আটকা' পড়লেন।
তিনি বলেন, এসব ব্যক্তির সঙ্গে কী ঘটতে চলেছে তা স্পষ্ট নয়। তারা সেখানে আটকা থাকতে পারেন। কিন্তু কতদিন তাদের এভাবে থাকতে হবে, তা আমরা জানি না।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কাতারের রাজধানী দোহায় এক হাজারেরও বেশি আফগান শরণার্থী রয়েছেন এবং পাকিস্তানে রয়েছেন কয়েক হাজার, হতে পারে সংখ্যাটি ১০ হাজার। কিন্তু 'বিশ্বের বহু দেশেই আফগান শরণার্থীরা রয়েছেন, যাদের কাগজপত্র যাচাইসহ প্রয়োজনীয় কাজগুলো এখন বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু ওই তৃতীয় দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুস্পষ্ট কোনো পথ নেই, তাই শরণার্থীদের আফগানিস্তান থেকে ফ্লাইটের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। ফলে যারা শিগগিরই দেশ ছাড়বেন বলে আশা করছিলেন, তাদের এখন কতদিন ওই দেশে অবস্থান করতে হবে, তা অস্পষ্ট।
গত সোমবার ট্রাম্পের সই করা নির্বাহী আদেশে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শরণার্থীদের পাশাপাশি অভিবাসীদের আগমন সামলানো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে 'শরণার্থীদের প্রবেশ যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত শরণার্থী গ্রহণের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।'
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক