পবিত্র হাজরে আসওয়াদের দুর্লভ ছবি প্রকাশ করল সৌদি কর্তৃপক্ষ
হাজরে আসওয়াদের আভিধানিক অর্থ কালো পাথর। মুসলমানদের কাছে এটি অতি মূল্যবান ও পবিত্র পাথর।
এবার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কাবা শরিফে অবস্থিত এ হাজরে আসওয়াদের উচ্চ রেজ্যুলেশনের ছবি প্রকাশ করেছেন সৌদি আরবের কর্মকর্তারা।
৪৯ হাজার মেগাপিক্সেলের এই ছবিগুলো তুলতে এবং প্রক্রিয়াজাত করতে সাকল্যে সময় লেগেছে ৫০ ঘন্টারও বেশি। গত সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায় সৌদির বিখ্যাত গ্র্যান্ড মসজিদ এবং মসজিদে নববী দেখভালের দায়িত্বরত জেনারেল প্রেসিডেন্সি।
এই দুই পবিত্র মসজিদের দায়িত্বরত জেনারেল প্রেসিডেন্সি, ইঞ্জিনিয়ারিং এজেন্সির সাথে মিলে হাজরে আসওয়াদের ১,০৫০টি ছবি তোলেন, যার প্রতিটি ১৬০ গিগাবাইটের। ৭ ঘণ্টা সময় নিয়ে পাথরটির ছবিগুলো তোলা হয়।
ছবি তুলতে ব্যবহার করা হয় ফোকাস স্টাকিং নামক নতুন একটি প্রযুক্তি; বিভিন্ন ফোকাস পয়েন্টের সাথে একাধিক ফটো একত্রিত করে ছবির মান তীক্ষ্ণ রাখতে সাহায্য করে এ প্রযুক্তি।
সাম্প্রতিক প্রকাশিত হাজরে আসওয়াদের স্বচ্ছ ছবি সম্পর্কে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের শিক্ষক আফিফি আল-আকিতি সিএনএনকে জানান, "এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এক অর্থে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা"।
এতটা কাছ থেকে এর আগে কখনো হাজরে আসওয়াদের ছবি তোলা হয়নি। আফিফি বলেন, "দেখা যাচ্ছে যে, এটি আসলে কালো নয়...প্রথমবারের মতো পাথরটির একটি বিবর্ধিত ডিজিটাল ফটো সামনে এলো এবং এখন প্রত্যেকে একেবারে কাছ থেকে যেন এ পাথরটিকে দেখতে পাবে"।
আফিফি বলেন, "মুসলিমদের কাছে এ পাথরটির ধর্মীয় তাৎপর্য অপিরিসীম এবং সম্প্রতি প্রকাশিত এর ছবিগুলো থেকে বোঝা যায় যে, ধর্মে বিজ্ঞানের ভূমিকা রয়েছে"।
মক্কা ইসলাম ধর্মের পবিত্রতম নগরী হিসেবে স্বীকৃত। এই শহরেই ইসলামের সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর জন্ম এবং এখানেই তিনি কুরআনের প্রথম ওহী (আল্লাহর বাণী) লাভ করেন।
হাজরে আসওয়াদ রুপার ফ্রেমে বাঁধানো এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান কাবা শরিফের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত।
মুসলিমরা প্রতি বছর হজ ও উমরাহ পালনের জন্য এখানে আসেন। হজযাত্রীরা হজ করতে গিয়ে হাজরে আসওয়াদে সরাসরি বা ইশারার মাধ্যমে চুম্বন দিয়ে থাকেন।
ভিড়ের কারণে চুম্বন সম্ভব না হলে হাতে ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করেন হাজিরা। হজ ও উমরার সময় মুসলিমরা কাবার চারপাশে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে সাতবার ঘোরেন, এটি তাওয়াফ নামে পরিচিত।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা) অনুসারীদের বলেছিলেন, তিনি মুহাম্মদ (সা)-কে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে দেখেছিলেন। মূলত সেই ঐতিহ্যই এখনো বয়ে চলেছে।
করোনা সংক্রমণের কারণে ভিড় এড়াতে গত বছর খুব কম সংখ্যক মানুষকে হজের অনুমতি দিয়েছিল সৌদি সরকার। এবারও হজ যাত্রীদের জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আল-আকিতি বলেন, "পাথরটি মূলত সাদা ছিল, কালো নয়। বিভিন্ন মুসলিম সূত্রমতে, বছরের পর বছর মানবজাতির পাথরটিকে স্পর্শ করে সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেদের পাপ মোচনের জন্য প্রার্থনার ফলেই এটি এমন কালো বর্ণ ধারণ করেছে"।
আল-আকিতি জানান, মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী এই পাথর সৃষ্টির প্রথম মানব হযরত আদম (আ) এর সময় থেকে পৃথিবীতে রয়েছে। আবার কোনও হাদীসে উল্লেখ রয়েছে, পবিত্র কাবা শরীফ নির্মাণের সময় বেহেশত থেকে ফেরেশতা জিবরাঈলের (আ) মাধ্যমে মহান আল্লাহ হযরত ইবরাহিম (আ)-কে পাথর দুটি পাঠিয়েছিলেন।
তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, এ পাথরটি একটি উল্কা (মহাজাগতিক বস্তু যা পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের প্রভাবে পৃথিবীর পৃষ্ঠে আসতে থাকে) হতে পারে। আল-আকিতি বলেন, হয়তো আকাশ থেকে ভূপতিত হবার ঘটনাটিই দ্বিতীয় তত্ত্বটি উদ্ভবে ভূমিকা রেখেছে।
- সূত্র-সিএনএন