লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জিতে সুপার লিগের শীর্ষে বাংলাদেশ
সেই ১৯৮৬ সাল থেকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে খেলা শুরু। এরপর লঙ্কানদের বিপক্ষে আটটি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। যেখানে ৪৮ বার দ্বীপদেশটির মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। জয়ও মিলেছে (এই সিরিজের আগের হিসাবে) সাতটি ম্যাচে। কিন্তু কোনোবারই সিরিজ জেতা হয়নি।
অবশেষে অপেক্ষা ফুরালো বাংলাদেশের। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিলো তামিম ইকবালের দল। যেকোনো ফরম্যাটে লঙ্কানদের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়। বড় দলগুলোর মধ্যে কেবল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয় বাকি রইলো বাংলাদেশের। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ঘরের মাটিতে ১১টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজের মধ্যে ১০টিই জিতলো বাংলাদেশে। কেবল ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হারে দলটি।
দারুণ এক জয়ে সিরিজ শুরু করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পেলো দাপুটে জয়। মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ডিএল পদ্ধতিতে শ্রীলঙ্কাকে ১০৩ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
এই জয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ সুপার লিগের শীর্ষে উঠে গেছে বাংলাদেশ। সুপার লিগে আট ম্যাচের পাঁচটিতে জিতে ৫০ পয়েন্ট পাওয়া বাংলাদেশ সবার উপরে। বাংলাদেশের পরেই আছে ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া। প্রতিটি দলের ঝুলিতেই আছে ৪০ পয়েন্ট করে।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। শুরুটা দুঃস্বপ্নের মতো হলেও মুশফিকুর রহিম দলকে ঠিক পথেই রাখেন। ম্যাচসেরা এই ব্যাটসম্যানের ১২৫ রানের অসাধারণ ইনিংসে ৪৮.১ ওভারে ১০ উইকেটে ২৪৬ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের বোলিং তোপে ১৪১ রানেই গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কার ইনিংস।
শ্রীলঙ্কা ৩৮ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৬ রান তোলার পর বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি আইনে ৪০ ওভারে শ্রীলঙ্কার নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৪৫, তখন সফরকারীদের হাতে মাত্র আর ২ ওভার। এই দুই ওভারে উইকেট হারায়নি লঙ্কানরা। অপরাজিত থেকে যান শ্রীলঙ্কার টেল এন্ডার ইসুরু উদানা ও দুসমন্থ চামিরা।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় লঙ্কানরা। দলীয় ২৪ রানে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক কুশল পেরেরাকে ফিরিয়ে দেন এই ম্যাচে অভিষেক হওয়া শরিফুল ইসলাম। প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টায় থাকা দানুশকা গুনাথিলাকাকে কিছুক্ষণ পর থামান মুস্তাফিজুর রহমান।
ইনিংস গোছানোর জোর চেষ্টা চালানো পাথুম নিসাঙ্কাকে সাজঘর দেখিয়ে দেন সাকিব আল হাসান। এখান থেকেই লঙ্কানদের চেপে ধরেন মিরাজ, মুস্তাফিজ, সাকিবরা। একটু পরপরই শ্রীলঙ্কার একটি করে উইকেট তুলে নিতে থাকেন তারা। এরমাঝে ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে ফিরিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে ছুঁয়ে ফেলেন সাকিব। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে মাশরাফি ও সাকিবের উইকেটসংখ্যা এখন ২৬৯।
শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বোচ্চ ২৪ রান করেন গুনাথিলাকা। এ ছাড়া কুশল পেরেরা ১৪, নিসাঙ্কা ২০, কুশল মেন্ডিস ১৫, ডি সিলভা ১০, আসেন বান্দারা ১৫ ও দাশুন শানাকা ১১ রান করেন। প্রথম ম্যাচে লঙ্কানদের ভোগানো মিরাজ এই ম্যাচেও নিয়েছেন ৩ উইকেট। মুস্তাফিজের শিকারও ৩ উইকেট। সাকিব ২টি ও শরিফুল একটি উইকেট নেন।
এরআগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের ইনিংসে সবচেয়ে নাম মুশফিকুর রহিম। বলা চলে একাই দলকে পথ দেখিয়ে গেছেন তিনি। প্রথম ওয়ানডেতেও মুশফিকের ব্যাটে মাঝারি স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। ৮৪ রান করে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এমন ঝুঁকি নেননি তিনি। দলের অবস্থার কথা মাথায় রেখে এক পাশ আগলে ব্যাটিং করে গেছেন মুশফিক।
সেঞ্চুরি পূরণ করতে ১১৪ বল খরচা করেছেন বাংলাদেশের অন্যতম এই ব্যাটিং ভরসা। যেখানে ৪ ছিল মাত্র ৬টি। কিন্তু সেঞ্চুরি পূর্ণ করেই দ্রুত রান তোলার কাছে মন লাগান তিনি। পরের ১৩ বলে ৪টি চারে ২৫ রান তুলেছেন মুশফিক। অথচ হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পথে মাত্র একটি চার মারেন তিনি।
বাজে শুরুর পর তার ওপর যে দায়িত্ব বর্তেছিল, তা অতি সাবধানতার সঙ্গে পালন করে গেছেন মুশফিক। ১২৭ বলে ১০টি চারে ১২৫ রান করে কেবল দলকেই বাঁচাননি তিনি, নিজের অপেক্ষাও ফুরিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যান।
এই সেঞ্চুরির দেখা পেতে ২৩ মাস ও ১৫টি ইনিংস অপেক্ষা করতে হয়েছে ম্যাচ সেরা মুশফিককে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের জুলাইতে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। এরপর কয়েকবার সুযোগ তৈরি করেও তিন অঙ্কে পৌঁছানো হয়নি তার। বিশ্বকাপেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮৩ রানে আউট হয়ে যান মুশফিক। বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সফরে ৯৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
ওয়ানডেতে এটা মুশফিকের অষ্টম সেঞ্চুরি। তামিম ইকবাল ১৩টি সেঞ্চুরি নিয়ে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবার উপরে। ৯টি সেঞ্চুরির মালিক সাকিব আল হাসান দুই নম্বরে। মহাকার্যকর এই ইনিংসটি খেলার পথে ওয়ানডের রানে সাকিবকে পেছনে ফেলেছেন মুশফিক। ওয়ানডেতে মুশফিকের রান এখন ৬ হাজার ৫৫৩। ৬ হাজার ৪৫১ রান নিয়ে সাকিব দুই নম্বরে। ৭ হাজার ৫১৭ রানের মালিক তামিম ইকবাল সবার উপরে।
শুরুটা দুঃস্বপ্নের হয় বাংলাদেশের। ১৫ রানের মধ্যেই ফিরে যান তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। লিটন দাসও ইনিংস বড় করতে পারেননি, ২৫ রান করে থামেন তিনি। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ৮৭ রানের জুটি গড়েন মুশফিক। মাহমুদউল্লাহ ৪১ রান করেন। শ্রীলঙ্কার দুসমন্থ চামিরা ও লক্ষণ সান্দাকান ৩টি করে উইকেট নেন। এ ছাড়া ইসুরু উদানা ২টি ও ভানিন্দও হাসারাঙ্গা একটি উইকেট নেন।