ফারাও সম্রাটের সাড়ে ৪ হাজার বছরের প্রাচীন 'সৌরনৌকা' এখন গ্র্যান্ড জাদুঘরে
খুব শীঘ্রই উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা, মিশরের গ্র্যান্ড জাদুঘরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে ফারাও খুফুর 'সৌরনৌকা'। অবিশ্বাস্যভাবে, চার হাজার ৬০০ বছরের পুরানো এই নৌকা এখনও অক্ষত রয়েছে বলে শনিবার জানিয়েছে মিশরের প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মিশরের ফারাও খুফুর বিখ্যাত পিরামিডের ভেতর কবর দেওয়ার কামরাগুলোর পাশেই একটি গর্তে মাটিচাপা ছিল এই নৌকা। মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো যে, এসব নৌকায় চড়ে তারা মৃত্যুর পরের জীবনে পাড়ি জমাবে। খুফুকে খ্রিস্টপূর্ব ২৫৬৬ সালে এখানে সমাহিত করা হয়।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলে, "সম্রাট খুফুর প্রথম নৌকাটি ১৯৫৪ সালে আবিষ্কৃত হয়। গ্রেট পিরামিডের দক্ষিণ কোণে এটিকে পাওয়া যায়। এতগুলো বছর পেরিয়ে এসে অবশেষে এই নৌকার জায়গা হবে গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামে।"
খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের সম্রাট খুফুর তৈরি এই সৌরনৌকা লম্বায় ৪২ মিটার (১৩৮ ফুট) এবং এর ওজন ২০ টন। নৌকাটিকে মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও প্রাচীনতম কাঠের তৈরি নিদর্শন হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
গ্র্যান্ড জাদুঘর পর্যন্ত নৌকাটিকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বিশেষ রিমোট-কন্ট্রোলড গাড়ি বেলজিয়াম থেকে আমদানি করেছে মিশর। শুক্রবার এটিকে স্থানান্তরের যাত্রা শুরু করার ১০ ঘন্টা পর তা গন্তব্যে পৌঁছায়।
বিখ্যাত পিরামিডের ভূমি, গিজা প্লাতো'তে গ্র্যান্ড জাদুঘরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করার পূর্বাভাস দিয়েছিল মিশর।
সাড়ে সাত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এলেও নৌকাটি একেবারেই অক্ষত রয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, জাদুঘর উন্মোচিত হওয়ার পর এটি হবে সাধারণ মানুষের মনোযোগের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।
১৯৫৪ সালে আবিষ্কৃত এই নৌকাটি বছরের পর বছর ধরে গিজা প্লাতোর জাদুঘরে প্রদর্শিত হতো। বিগত ১৭ বছর ধরে গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে মিশর। নির্মাণ সম্পন্ন হলে এখানে এক লাখেরও বেশি নিদর্শন রাখা সম্ভব হলে জানিয়েছে মিশরীয় কর্তৃপক্ষ।
২০১১ সালের বিপ্লব থেকে শুরু গত দুই বছর ধরে করোনাভাইরাস মহামারিতে জর্জরিত, দেশের পর্যটন শিল্পকে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে মিশর। সেই উদ্দেশ্যেই, সম্প্রতি তারা বেশকিছু উল্লেখযোগ্য প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কার করে বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছে।
গত এপ্রিলে মিশরীয় কর্তৃপক্ষ কায়রোর বিখ্যাত 'মিশরীয় জাদুঘর' থেকে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২২ জন ফারাওয়ের মমি স্থানান্তরিত করে শহরের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ইজিপশিয়ান সিভিলাইজেশনে নিয়ে আসে।
টেলিভিশনের এক ইভেন্টে দেখা গেছে, মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি সেই অনুষ্ঠানে কফিনগুলোকে অভিবাদন জানাচ্ছেন, যার মধ্যে দ্বিতীয় র্যামসেস ও রাণী হাটশেপসুটের মমিও ছিল।
সূত্র: ডেইলি মেইল