নির্যাতিতের আহাজারি ও পোড়া গন্ধে এখনও ভারী পীরগঞ্জের বাতাস
ভাঙচুর আর অগ্নিসংযোগের ছাপ এখনও গ্রামটির অধিকাংশ বাড়িঘরে রয়ে গেছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে একাধিক বাড়ি। আজ মঙ্গলবারও পোড়া গন্ধে ভারী এলাকার বাতাস। মানসিক নির্যাতনের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে শিশুরাও।
তবে বেশি প্রভাব পড়েছে নারীদের মনে। চারদিকে সবুজ ধানখেতে ঘেরা, মাঝে হিন্দুধর্মাবলম্বী প্রায় ৭০টি পরিবারের বাস। এর মধ্যে ১২২ জন পুরুষ, ১০২ জন নারী ও ৪৫ জন শিশু রয়েছে।
তাণ্ডবে তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, ভাঙচুর করা হয়েছে। লুট করা হয়েছে টাকা, স্বর্ণালংকার, ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ অনেক কিছু। এমনকি মুদিদোকান ও ব্যাটারিচালিত ভ্যানগাড়িতেও আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই হামলার ঘটনা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মাঝিপাড়া গ্রামের। মূলত মাঝিপাড়া নয়, ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টের অজুহাতে হামলা তাণ্ডব চালানো হয়েছে হিন্দু অধ্যষিত বড় করিমপুর এলাকায়।
গত রোববার ওই গ্রামে ভাঙচুর ও আগ্নিসংযোগ করে উত্তেজিত জনতা। এখন এই গ্রামের অনেকে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। কেউবা আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় মন্দিরে।
অন্তঃসত্ত্বার পেটে লাথি মেরে লুটপাট
জীবনের প্রথম নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা বাসনা রানী। ঘরের বাইরে চলছে তাণ্ডব আর অগ্নিসংযোগ। প্রতিবেশীরা জীবন রক্ষা করছেন ধান খেতে লুকিয়ে। কিন্তু বাসনা ঘরের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাকে রক্ষার জন্য স্বামী প্রদীপ দাসও ঘরেই থেকে গেছেন।
শেষ রক্ষা বাসনার হয়েছে, কিন্তু এর মধ্যেও তার পেটে লাথি মেরেছে দুর্বৃত্তরা। অনাগত সন্তান কেমন আছে, এখনও জানেন না বাসনা।
গ্রামের অন্য বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হলেও বাসনার বাড়ি শুধু ভাঙচুর করা হয়েছে। মঙ্গলবার বৃষ্টির সকালে গ্রামের অর্জুন দাসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন তিনি।
বাসনা রানীর পেটে লাথি মারার সময় স্বামী প্রদীপ এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করা হয়। পরে বাসনাকে জাপটে ধরে থাকেন প্রদীপ।
এক পর্যায়ে টেলিভিশন ও আসবাব ভাঙচুর শুর করে দুর্বৃত্তরা। তখন বাসনা চিৎকার শুরু করলে স্বামী তার মুখ চেপে ধরেন। আর কিছু না বলে কয়েক মিনিট পরেই চলে যায় দুর্বৃত্তরা।
সারারাত বাসনাকে জড়িয়ে ধরেই পার করেন প্রদীপ। ভোরের দিকে পুলিশের মাইকিংয়ের শব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন তারা। বেরিয়ে দেখেন গ্রামের অন্যরা নিঃস্ব হয়ে আহাজারি করছেন।
বাসনার শাশুড়ি কান্দ্রি বালা বলেন, তার ছেলের অন্তঃসত্ত্বা বউয়ের পেটে লাথি মেরে ঘরের আসবাব, নগদ টাকা ও গহনা লুট করে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মুখোশ পরে থাকায় তাদের কাউকে চেনা যায়নি।
পুত্রবধূকে কোনো চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে কান্দ্রি বলেন, 'বাবা এখন তো খাওয়ার কিছু নেই। ডাক্তারের কাছে কীভাবে যাই? ভগবান ভাগ্যে যা রাখছে তা-ই হবে।'
পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মাছ ধরার জাল, লুট করে নিয়েছে গয়না, টাকা, গরু
এ গ্রামের দু-একজনের আর্থিক অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও অধিকাংশ মানুষের জীবিকা মাছ ধরা। তবে তাণ্ডব আর মাছ ধরার অবস্থাও রাখেনি। কারণ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের জাল। ওই গ্রামের পাশে অবস্থিত বিলে ফেলা জালও লুটপাট করা হয়েছে।
লক্ষ্মী রানী বলেন, 'সেদিন রাতে যে কাপড় পরে পালিয়ে গিয়েছি, শুধু সেই কাপড় এখন আছে। এক কাপড়ে দিন চলছে। খাবার নেই। লুট করা হয়েছে টাকাপয়সা, স্বর্ণালঙ্কার। লুট করা হয়েছে তিনটি গরু। এখনো ওই রাতের আতঙ্ক চোখে ভাসছে। কীভাবে বেঁচে আছি এটা ভগবান জানেন।'
লক্ষ্মী রানীর স্বামী অভয় পদ মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু মৌলবাদী তাণ্ডবে তাদের বাড়ির পাঁচটি জাল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মী রানী বলেন, 'সেদিন রাতে যে কাপড় পরে পালিয়ে গিয়েছি, শুধু সেই কাপড় এখন আছে। এক কাপড়ে দিন চলছে। খাবার নেই। লুট করা হয়েছে টাকাপয়সা, স্বর্ণালঙ্কার। লুট করা হয়েছে তিনটি গরু। এখনো ওই রাতের আতঙ্ক চোখে ভাসছে। কীভাবে বেঁচে আছি এটা ভগবান জানেন।'
কয়েক বছর আগে ভাদই রানী দাসের স্বামী মারা গেছেন। দুই ছেলের সঙ্গে বসবাস করেন তিনি। তার বাড়ির সবকিছু লুট করেছে তাণ্ডবকারীরা।
ভাদই বলেন, তাণ্ডবের সময় এমন কোনো ঘটনা নেই যা তারা করেনি। জাল পুড়িয়ে দিয়েছে। নলকূপের হাতল খুলে নিয়ে গেছে। ঘরের তালা ভেঙে লুটপাট করেছে। শুধু তা-ই নয়, গ্রামের শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দিরের ভাঙচুর করা হয়ছে। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রতিমায়। কী করার বাকী আছে তাদের? অথচ প্রশাসনের কোনো খোঁজ ছিল না।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তাণ্ডবের প্রায় ৫ মিনিট আগে এই এলাকার বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর রাত সাড়ে নয়টার দিকে অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়। চলে প্রায় ৪০ মিনিট।
তবে পাশের করিমপুরের পাশের এলাকায় ফেসবুক পোস্টদাতার বাড়িতে ছিল ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশের একটি দল। বড় করিমপুরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ শুরুর পর তারা ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এতে উত্তেজিত লোকজন ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সারারাত এলাকা পাহারা দেয়।
'বাবা, আমি কি পড়াশোনা করব না? ওরা তো আমার সব বই পুড়িয়ে ফেলেছে।'
রান্নাঘর ছাড়া আর কোথাও চাল নেই গ্রামের মোড়ল ননি গোপালের বাড়িতে। মন্দিরের উত্তর পাশের এই বাসিন্দার তিন কক্ষের বাড়ির সবকিছু পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রান্না করা ভাত এখনো পাতিলে নষ্ট হয়ে আছে। আধাপাকা ঘরের টিন থেকে বিছানা, সবকিছুই পুড়ে ছাই। লুট করা হয়েছে সোনাদানা, টাকাপয়সা।
বাড়িতে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে ননি গোপাল পোড়া ধানের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। আগুনে ভষ্মীভূত ঘর দেখিয়ে তিনি বললেন, 'এমন বিভিষীকাময় সময় আমার জীবনে আসেনি। এক লুঙ্গি ছাড়া আমার আর কিছু নেই। তারা হত্যার উদ্দেশ্যে এসেছিল। আমাদের না পেয়ে ধান-চাল সব পুড়িয়ে ফেলেছে। কিন্তু আমরা বউ, মেয়েসহ পালিয়ে চলে যাই। এরপর তারা আমার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব আমি। আমার সন্তানের বইপত্রসহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ সময় তাকে এসে জড়িয়ে ধরে তার ১০ বছর বয়সী মেয়ে মমতা বর্ষা দাস। এলাকার হাতিবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে সে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, 'বাবা, আমি কি পড়াশোনা করব না? ওরা তো আমার সব বই পুড়িয়ে ফেলেছে। ওরা কি পড়াশোনা চায় না? কেন আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে তারা?'
তিনি আরও বলেন, 'গত দুদিন ধরে আমার ছোটভাইয়ের দেওয়া খাবার খেয়ে বেঁচে আছি। ছোট ভাইয়ের বাড়িতে হামলা করা হলেও বেশি ক্ষতি হয়নি। সেখানে আমার পরিবারের লোকজন নিয়ে থাকছি।'
এ সময় তাকে এসে জড়িয়ে ধরে তার ১০ বছর বয়সী মেয়ে মমতা বর্ষা দাস। এলাকার হাতিবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে সে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, 'বাবা, আমি কি পড়াশোনা করব না? ওরা তো আমার সব বই পুড়িয়ে ফেলেছে। ওরা কি পড়াশোনা চায় না? কেন আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে তারা?'
সকাল থেকে হালকা বৃষ্টির মধ্যেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন সন্ধ্যা রানী। দুই সন্তানের একজন বাকপ্রতিবন্ধী। অন্যজন মাছ ধরে সংসার চালান। কিন্তু উত্তেজিত জনতার আগুনে পুড়ে গেছে মাছ ধরার জাল। বাড়িতে রাখা চালও পুড়ে অঙ্গার হয়েছে তার। এ কারণে পথ চেয়ে বসে আছেন তিনি।
সন্ধ্যা বলেন, 'গতকাল একজন খাবার দিয়েছে সেটা সন্তানদের খাইয়েছি। আজও খাবারের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু এভাবে আর কতদিন। সন্তানদের কষ্ট আর সইতে পারছি না।'
বাড়ির সঙ্গে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার একমাত্র অবলম্বন গরুটি
পূর্ণিমা রানী দাসের একমাত্র মেয়ে নমিতা রানী দাস এবার এসএসসি পাস করেছে। কলেজে ভর্তি হয়েছে সে। তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য একটি গরু পালছিলেন পূর্নিমা। এই তাণ্ডবে বাড়ির সাথে সেই গরু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
গ্রামের মন্দিরের সামনে কাঁদতে কাঁদতে পূর্ণিমা বলেন, 'এখন কীভাবে আমার মেয়েকে বিয়ে দিব? আমাদের নিঃস্ব করে দিল তারা।'
পূর্ণিমা রানী দাসের একমাত্র মেয়ে নমিতা রানী দাস এবার এসএসসি পাস করেছে। কলেজে ভর্তি হয়েছে সে। তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য একটি গরু পালছিলেন পূর্নিমা। এই তাণ্ডবে বাড়ির সাথে সেই গরু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
হামলা শুরুর পর নারী, শিশু ও পুরুষেরা পালিয়ে ছিলেন বাড়ির পাশের ধানখেত ও বাঁশবাগানে। সোমবার ভোরে পুলিশ ও র্যাব মাইকে ডাকার পর তারা ফিরে আসেন। অবশ্য ততক্ষণে তাদের সব শেষ হয়ে গেছে। ফিরে এসে দেখে তাদের বাড়িঘরে ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে। মঙ্গলবার সকালের হালকা বৃষ্টির সময় তারা আরও বিপদে পড়েছেন। বৃষ্টি শুরু হলে গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা মন্দিরের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে বৃষ্টিতে ঠায় দাড়িয়ে রয়েছে।
তাদের একজন জগদীস দাস। তিনি বলেন, 'তাণ্ডবের পর বৃষ্টির আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার কিছু নেই। তিন ছেলে এক মেয়ে নিয়ে চরম দুর্ভোগে আছি। গতকাল একজন মুড়ি, চিড়া দিয়েছিল, তা খেয়েছি। এখন তাদের কী খাওয়াব সেই ভাবনায় মাথায় অন্য চিন্তা কাজ করছে না। প্রশাসন কবে খাবার দেবে সেটারও ঠিক-ঠিকানা নেই।'
বড় করিমপুরের দক্ষিণ দিকে মাঝিপাড়া গ্রাম। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, এক কিশোরের ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে গত রোববার দুপুর থেকেই গ্রামে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিকেল থেকে স্থানীয় ও আশপাশের এলাকার মানুষ গ্রামে জড়ো হতে থাকে।
সন্ধ্যার পরপর গ্রামে বিপুলসংখ্যক মানুষ জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করে এবং স্লোগান দিতে থাকে। খবর পেয়ে সন্ধ্যার পর পীরগঞ্জ থানা-পুলিশের ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল গিয়ে সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে ওই কিশোরের বাড়ির এলাকায় অবস্থান নেয়।
হামলাকারীরা পুলিশ দেখে কিশোরের বাড়ির দিকে না গিয়ে বড় করিমপুরে হিন্দুদের আরেক বসতিতে হামলা চালায়।
স্থানীয়দের অভিযোগের আঙুল প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের অবস্থান থেকে বড় করিমপুর বেশি দূরে নয়। তারা আসতে দেরি করেছে। আর ফায়ার সার্ভিস তো খেলা বাইরে থেকে দেখে মাঠে নেমেছে।
বড় করিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় পূজা কমিটির নেতা অর্জুন চন্দ্র বলেন, 'আমাদের বাড়িঘর পুড়ে যাচ্ছে, ফায়ার সার্ভিসকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। কিন্তু তারা সময়মতো আসেনি। তাণ্ডবলীলা শেষ হওয়ার সময় তারা এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আগে আসলে হয়তো ক্ষতির পরিমাণ কম হতো। পুলিশকে বারবার ফোন করা হলেও পাওয়া যায়নি। এলাকার মানুষই তাণ্ডব চালিয়েছে। এখন নাহয় পুলিশ পাহারায় আছি। কিন্তু পুলিশ চলে গেলে আমরা কীভাবে বসবাস করব? কারা নিরাপত্তা দেবে আমাদের?'
ভ্যানচালক শরিফুল সেদিনের তাণ্ডবের প্রত্যক্ষদর্শী। বলেন, বাড়িতে হঠাৎ খবর পেলাম আগুনের। হিন্দুপাড়ায় গিয়ে দেখি একসাথে ওই গ্রামে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। হিন্দু নারী-পুরুষ জীবন বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন দিকে ছুটছে। অথচ নির্বিকার প্রশাসন।
বড় করিমপুরের পূর্ব দিকে মুসলমান বসতি। এই গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম। ভ্যানচালক শরিফুল সেদিনের তাণ্ডবের প্রত্যক্ষদর্শী। বলেন, বাড়িতে হঠাৎ খবর পেলাম আগুনের। হিন্দুপাড়ায় গিয়ে দেখি একসাথে ওই গ্রামে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। হিন্দু নারী-পুরুষ জীবন বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন দিকে ছুটছে। অথচ নির্বিকার প্রশাসন। হাজার হাজার লোকজন মোটরসাইকেল আর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওই গ্রামে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে, এটা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেই জানতে পারবে। তবে এলাকার বাসিন্দাদের কাছে হামলাকারীদের বাইরের মানুষ মনে হয়েছে।
জানতে চাইলে রংপুরের পীরগঞ্জ থানার ওসি সুরেশ চন্দ্র বলেন, 'আমি ঘটনাস্থলে প্রথম থেকেই আছি। প্রথমে পরিতোষের বাড়ি এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রাথমিকভাবে ৪০০ থেকে ৫০০ লোকজন ছিলেন। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই হঠাৎ হাজার হাজার মানুষের ঢল শুরু হয় করিমপুরে। তখন আরও পুলিশ এনেও পরিস্থিতি কন্ট্রোল করা যায়নি। তবে ফায়ার সার্ভিসের উদাসীনতার কারণে বেশি বাড়িঘর পুড়ে গেছে। তারা অ্যাক্টিভ থাকলে এত ভয়াবহ পরিস্থিতি ঘটত না।'
পুলিশ কিংবা বড় করিমপুরের বাসিন্দাদের দেওয়া অভিযোগ একেবারে অস্বীকার করেননি পীরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রতন চন্দ্র শর্মা। তবে তিনি ওইদিন ছুটিতে ছিলেন। ছুটি শেষে খোঁজ নিয়ে দেখেন ফায়ার সার্ভিস তাদের কার্যক্রম শুরুতে দেরি করেছে। অবশ্য তার পেছনে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
রতন চন্দ্র বলেন, 'হাজার হাজার উত্তেজিত জনতার কাছে ফায়ার সার্ভিস কিছুই ছিল না। জীবনের নিরাপত্তা না থাকলে সেখানে আমরা কাজ করি কীভাবে? এত টাকার গাড়ি, যন্ত্রপাতি নিয়ে তো এত বড় রিস্ক নেওয়া সম্ভব নয়। তবে আমরা বারবার চেষ্টা করেছি পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করার। তারা আমাদের নিরাপত্তা দিলে অভিযান বেগবান হতো।'