সুইস কর্তৃপক্ষের কাছে অর্থ পাচারের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ
ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে জানতে সুইস অথরিটির কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট(বিএফআইইউ)। শনিবার বিএফআইইউ'র অতিরিক্ত পরিচালক কামাল হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
"পাচার করা অর্থ উদ্ধার জটিল কাজ। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ সম্পর্কে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ," 'বাংলাদেশ মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসীকার্যে অর্থায়নে প্রতিরোধ কার্যক্রমের ২০ বছর' শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন কামাল হোসেন।
"সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক সেখানে জমা থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থের বিষয়ে ২০১৪ সাল থেকেই তথ্য প্রকাশ করে আসছে। সেই তথ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুদক ও তদন্তকারী সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে," যোগ করেন কামাল হোসেন।
সেমিনারে জানানো হয়, এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ৮০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আর্থিক তথ্য সংগ্রহ করেছে বিএফআইইউ।
মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) চলতি অর্থবছরের ( ২০২১-২২) এপ্রিল পর্যন্ত তদন্তাধীন ৯টি মামলার বিপরীতে ৮৬৬ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে।
যদিও আগের (২০২০-২১) অর্থবছরে ৭টি মামলার বিপরীতে বাজেয়াপ্তকৃত টাকার পরিমাণ ছিল ৩৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। একইসঙ্গে গত পাঁচ বছরে ৬৩টি তদন্তাধীন মামলার বিপরীতে টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা।
এছাড়া, বিএফআইইউ চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে বাজেয়াপ্তকৃত অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা পড়েছে ২৭ কোটি টাকা। একইসঙ্গে গত ৫ অর্থবছরে সরকারের কোষাগারে জমা পড়েছে ১ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা।
হেড অব বিএফআইইউ মাসুদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, এবিবি চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন, অর্থ মন্ত্রনালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ; এছাড়া বিএফআইইউ'র একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ থেকে মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, হংকং, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের দেশগুলোতে অর্থপাচার হয় বলে সেমিনারে জানানো হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ বলেন, মানিলন্ডারিং মানে শুধু বিদেশে টাকা পাচার নয়; অবৈধ উপার্জিত অর্থ বৈধতার চেষ্টা করা হলে সেটিকে লন্ডারিং বলা হয়।
"আমাদের আত্মতুষ্টিতে থাকলে চলবেনা, মানুষ আমাদের কাজে সন্তুষ্ট কিনা তা ভাবতে হবে। কাজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তা অর্জন করতে হবে," যোগ করেন তিনি।
দেশে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি ও ডলার এক্সচেঞ্জ রেট: গভর্নর
কোভিড পরবর্তীতে দেশে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি ও ডলার এক্সচেঞ্জ রেট। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে আমাদের সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
বিএফআইইউ'র সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর আরও জানান, "আমাদের যে পরিমাণে রিজার্ভ রয়েছে তাতে ভয়ের কিছু নেই। বর্তমানে সাড়ে ৪১ বিলিয়ন ডলার রয়েছে, যা দিয়ে তিন মাসের আমদানি বিল মেটানো যাবে।"
গত অর্থবছরে ব্যাংগুলো থেকে ৭.৯ বিলিয়ন ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনে নিয়েছে, কারণ সে সময় কোভিডের কারণে আমদানি ব্যয় কমানোর প্রয়োজন ছিল। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর কাছে চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
"আমাদের যদি প্রতিমাসে ৭ বিলিয়ন করে আমদানি ব্যয় মেটাতে হয়, তাহলে তিন মাসে প্রয়োজন হবে সাড়ে ২২ বিলিয়ন। এছাড়া সরকারের প্রয়োজনে জরুরি খাদ্য, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, সার আমদানিতে ব্যয় হবে ৩ বিলিয়ন ডলার। মোট তিন মাসে ব্যয় হবে প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার। আমাদের এখন যে রিজার্ভ রয়েছে তাতে আশঙ্কার কিছু নেই," যোগ করেন গভর্নর।
বিএফআইইউ'র বিষয়ে তিনি আরও বলেন, অ্যান্টি মানি লন্ডারিংয়ের সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মানি লন্ডারিংয়ের অর্থ যেন সন্ত্রাসবাদে চলে না যায়, সেদিকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান গভর্নর। ২০১৬ সালের দুর্ঘটনার পর সরকার সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে বিরাট ভূমিকা রাখছে বলে জানা তিনি।
"যেকোনো সংকটের মুহূর্তে অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে, তাই আপনারা সার্বিক অবস্থা সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করবেন," যোগ করেন গভর্নর।
সিলেটের কৃষকদের ঋণের বিষয়ে তিনি বলেন, সিলেটের কৃষকরা ঋণ পরিশোধ করুক বা না করুক তাদেরকে ঋণ বিতরণ বাড়িয়ে দিতে হবে। এবং সেসব বন্যার্ত এলাকায় সিএসআর খাত থেকেও ব্যয়ের পরামর্শ দেন তিনি।