আইসিডিতে স্বাভাবিক হয়েছে রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার জট
জাহাজ সংকটের কারণে বেসরকারী আইসিডিগুলোতে (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো) রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার জট স্বাভাবিক হয়েছে। গত ১৭ দিনের ব্যবধানে ১৯টি আইসিডিতে কমেছে ১১ হাজার ৪৬৮ টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার) রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার।
১৯টি বেসরকারী আইসিডিতে রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার রাখার সক্ষমতা ১০ হাজার টিইইউস। গত ১৯ জুলাই রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনারের সংখ্যা হয়েছিল ১৭,০৪১ টিইইউস। ১৭ দিনের ব্যবধানে ৫ আগস্ট এই সংখ্যা নেমে এসেছে ৫৫৭৩ টিইইউসে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দরের জেটিতে কন্টেইনার জাহাজের বার্থিং সংখ্যা বাড়ানো, চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে চলাচলকারী জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ের কারণে অল্প সময়ের মধ্যে জট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।
দেশের শতভাগ রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের আগে কন্টেইনার বোঝাইয়ের উদ্দেশ্যে বেসরকারি আইসিডিতে নিয়ে আসা হয়। শিডিউল অনুযায়ী জাহাজীকরণের উদ্দেশ্যে কন্টেইনারগুলো আইসিডি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।
এছাড়া বিভিন্ন খাদ্যপণ্যসহ ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয় আইসিডিগুলোতে। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে কন্টেইনার জট বাড়তে থাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমানে সব ধরনের আমদানি পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান টিবিএসকে বলেন, রপ্তানি পণ্যের জট স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনারবাহী ২টি জাহাজের বার্থিং বাড়ানো হয়। চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে ২টি জাহাজের স্থলে ৬টি জাহাজের বাড়ানো হয়।
তিনি আরো বলেন, বন্দরের ইয়ার্ড থেকে আইসিডিগুলোতে ১১ হাজার টিইইউস কন্টেইনার সরানো হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার ডেলিভারি, হ্যান্ডেলিংসহ সবকিছুই স্বাভাবিক রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার রাখার সক্ষমতা ৪৯০১৮ টিইইউস। বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ইয়ার্ডে সক্ষমতার ১৫ ভাগ জায়গা খালি রাখতে হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিল ৪০,৩৪৮ টিইইউস। বন্দরের কন্টেইনার রাখার সক্ষমতার চাইতে প্রায় ১৮ ভাগ জায়গা খালি রয়েছে।
ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে জাহাজ সংকটের কারণে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের পরিমাণ কমে যায়। স্বাভাবিক সময়ে আইসিডিতে পণ্য আসার ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে পণ্য জাহাজীকরণ হতো। জট পরিস্থিতিতে আইসিডিতে পণ্য আসার পর জাহাজীকরণের জন্য ১৫ দিনেরও বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে। ডিপো গেইটে পণ্য নিয়ে শত শত ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানকে অপেক্ষা করতে হয়েছে এক সপ্তাহেরও বেশি সময়।
বেসরকারি আইসিডি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো এসোসিয়েশন (বিকডা) এর সভাপতি নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, "আইসিডিগুলোতে রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনারের যে জট ছিল তা এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক। সংকট সমাধানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইসিডি মালিক, মেইন লাইন অপারেটরদের (এমএলও) সাথে সমন্বয় সাধন করেছে। এটি না হলে জট পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারতো"।
তিনি আরো বলেন, "স্বাভাবিক সময়ে আইসিডিগুলোতে ২ থেকে ৬ হাজার রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার থাকে। গত ১ সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত জট কমে ৫ আগস্ট স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে। এই অবস্থা ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে"।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং পোর্ট লিংক আইসিডির সিইও সৈয়দ ইকবাল আলী শিমুল বলেন, "ঈদের ছুটিতে গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ থাকায় ওই সময়ে আইসিডিতে রপ্তানি পণ্য আসার পরিমাণ তুলনামুলক কমে যায়। জট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে এটি ভূমিকা রেখেছে বলে আমি মনে করি"।
তিনি আরো বলেন, "তুলনামূলক ছোট আইসিডিগুলোতে রপ্তানি কন্টেইনারের সংখ্যা স্বাভাবিক হলেও বড় আইসিডিগুলোতে রপ্তানি কন্টেইনার স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু বেশি আছে। আগামী ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে এই সংখ্যা স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে"।