নিরাপদ খাদ্যের অভাবে বাড়ছে ডায়রিয়া, প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে ৫% মানুষ: খাদ্যসচিব
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/02/474912604_516908968087625_5214725689181245911_n.jpg)
পুষ্টি নিশ্চিত করতে হলে নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিরাপদ খাদ্য শিশু ও গর্ভবতী নারীদের পুষ্টিহীনতার অন্যতম কারণ। এছাড়া, প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ অনিরাপদ খাবার গ্রহণের ফলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। রোববার রাজধানীর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের লেকচার হলে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) সেমিনারটির আয়োজন করে। এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে— 'খাদ্য হোক নিরাপদ, সুস্থ থাকুক জনগণ।'
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিএফএসএ চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) জাকারিয়া। প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল খালেক ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সাল ইমাম। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম।
খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও সুস্থতা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। সুস্থ থাকতে হলে নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষের খাদ্য কতটা নিরাপদ, সে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি বলেন, অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের কারণে প্রতিদিন ৫ শতাংশ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ইকোনাইটের সংক্রমণে শাক-সবজিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা বিদেশে রপ্তানিতেও বাধা সৃষ্টি করছে।
বিএফএসএ চেয়ারম্যান জাকারিয়া জানান, সংস্থাটির ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জন্য ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন, খুলনায় নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগার স্থাপনের জন্য জমি বরাদ্দ এবং শিশুদের নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে সচেতন করতে 'লুডু খেলা ঘর' চালু করা। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিদিন ৮০ জন ও বছরে ৩০ হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এর অন্যতম কারণ অনিরাপদ খাদ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, ব্যাকটেরিয়া, রাসায়নিক পদার্থ, কাঁচের টুকরা ও বিষাক্ত উপাদান মিশ্রিত খাদ্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। বিশ্বে প্রতি বছর ৪ লাখ ২০ হাজার শিশু অনিরাপদ খাদ্যের কারণে মারা যায়। বাংলাদেশে বছরে এ সংখ্যা ৩৫ হাজার। ২০২১ সালের বাংলাদেশ খাদ্য ও পুষ্টি ইনস্টিটিউটের তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, ঘি, গুড়, মধু, মিষ্টি, হলুদ, মরিচ গুঁড়া, গুঁড়া দুধ ও লবণের মতো খাদ্যে ব্যাপক পরিমাণে ভেজাল মেশানো হচ্ছে।
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কী করতে হবে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, খাবার সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে এবং রান্না ও কাঁচা খাবার একসঙ্গে রাখা যাবে না। রান্নার সময় ঢেকে রাখতে হবে, খাবার সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে এবং নিরাপদ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বাজার থেকে খাবার কেনার সময় সতর্ক হতে হবে, মৌসুমি ফল ও শাক-সবজি কেনার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়া পঁচা বা গন্ধযুক্ত খাবার কেনা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।