হলিউডে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন মিথিলা
মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২০ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তানজিয়া জামান মিথিলা। চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেমন আলোচিত হয়েছেন তেমনি নিজে হয়েছেন আশাবাদীও। দেশের প্রতিনিধি হয়ে যাচ্ছেন আমেরিকায় আয়োজিত মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত আসরে। বাংলাদেশের আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কাছে নিজের অনুভূতি জানানোর পাশাপাশি জবার দিয়েছেন তাকে নিয়ে নানা আলোচনার।
শুরুতেই বললেন মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ হওয়ার অনূভূতি।
'আমি আসলে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে আমি চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এটা আসলে অন্যরকম অনুভূতি। এটা আমার জন্য খুব গর্বের। একজন বলিউড তারকা এসে আমাকে মুকুট পড়িয়েছেন। সবাই খুব প্রশংসা করেছেন। স্বপ্নের মতো মনে হয়েছে সবকিছু।'
জানতে চাই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে আগে থেকে কতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি? মিথিলা বলেন, 'আমি সাত বছর ধরে মিডিয়াতে কাজ করি। র্যাম্পে কাজ করেছি। আমাকে সবাই চেনেন। আমি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে পারি, হাঁটতে পারি, স্যোশাল মিডিয়ায় কিভাবে পোস্ট দিতে হয় সেটা জানি। আমি ইতিমধ্যে জনপ্রিয়। তাছাড়া বলিউডে রোহিঙ্গা নামে একটা ছবিতে অভিনয় করেছি। তাই আবেদন করার শুরুতে একটা আত্মবিশ্বাস ছিলই। মূল কথা, একটা প্রতিযোগিতায় যাওয়ার আগে একজন প্রতিযোগীর যা যা দরকার সবই ছিল। পাশাপাশি একটা ঝুঁকিও ছিল। আমি যদি বিজয়ী না হই তাহলে সেটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য একপ্রকার নেতিবাচক ইমেজ নিয়ে আসবে।'
মিথিলা দাবি করেন, অন্যান্য প্রতিযোগীর চেয়ে এসব কারণেই এগিয়ে ছিলেন তিনি। অন্য প্রতিযোগীদের তার মতো অভিজ্ঞতা ছিল না। এ কারণেই তার আত্মবিশ্বাসও বেশি ছিল। তবে পুরো প্রতিযোগিতায় তার ভয় ছিল প্রশ্ন-উত্তর পর্ব নিয়ে।
তিনি বলেন, 'এখানে জীবনের একটা রুটিন হয়ে যায়। আমি সকালে কখন ঘুম থেকে উঠব, খাবারটা ঠিক সময়ে খাওয়া, ওয়ার্ক আউট ঠিক সময়ে করা, রিহার্সেল করা, সারাদিন ফিটফাট থাকা এসবে অভ্যস্ত হয়েছি। এসব কিন্তু প্রতিদিন ঠিকমতো করি না আমরা। কিন্তু এখানে করতে হয়েছে। তাছাড়া আমি সবসময় চিন্তা করতাম অন্যদের থেকে আমাকে আলাদা হিসেবে তুলে ধরতে হবে। এ কারণে চেষ্টা করেছি নিজের সেরাটা দিয়ে কাজ করার।'
তবে মিস ইউনিভার্স মিথিলার চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে এরইমধ্যে বির্তক তৈরি হয়েছে। বয়স কমিয়ে অংশ নেওয়া থেকে শুরু স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে আগে থেকেই সম্পর্ক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলেছেন অনেকে। এসব নিয়ে সরাসরি কথা বলেন মিথিলা।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'বড় কোন কিছু করতে গেলে কিছু মানুষ ভালোভাবে নেবেন, কিছু মানুষ খারাপভাবে নেবেন। খারাপ মানুষ তো খারাপ কথা বলবেই। এখানে আরও প্রতিযোগী ছিল। তাদেরও নিশ্চয়ই বিজয়ী হবার প্রত্যাশা ছিল। অনেক প্রতিযোগী আছে, তারা হয়ত আমার চেয়ে ভালভাবে কথা বলে কিন্তু র্যাম্পে হাঁটতে পারছে না। বুঝতে হবে কথা বলার ওপরেই সবকিছু নয়। একজন মানুষের পুরা প্যাকেজ যদি ঠিক থাকে, তাহলেই তো পুরা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। আমি অভিজ্ঞ। আমি জানি কোন পরিস্থিতিতে কী করতে হয়। খারাপ মানুষের কথা শুনে যদি আমি যদি মন খারাপ করি বা আত্মবিশ্বাস হারাই তাহলে তো হবে না। আমাকে নিয়ে যারা ইতিবাচক কথা বলছেন সে ইতিবাচকতা নিয়েই সামনে এগোতে চাই।'
নিজের বয়স লুকানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমেরিকার অর্গানাইজার যারা তাদের কাছে আমার যাবতীয় ডকুমেন্টস চলে গেছে। আমার পাসপোর্ট, আমার জন্মনিবন্ধন, ন্যাশনাল আইডি সব চলে গেছে। এটা যদি ঠিক না হয় তাহলে আমাকে বাদ করে দিবে। ওখানে কিন্তু আমার হাত নেই। এমনকি বাংলাদেশের কারও হাতেই নেই। '
স্পন্সরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে সুসম্পর্ক নিয়ে মিথিলা বলেন, 'ওভাবে চিন্তা করলে কিন্তু আমার সবার সাথেই ভালো সম্পর্ক। যারা বিচারক ছিলেন, যারা আয়োজক, যারা গ্রুমার সবাইকে আমি চিনি। এখন এটা কি আমার দোষ! আমি ইন্ডাস্ট্রিতে সাত বছর হলো কাজ করি। আমার কি চেনা পরিচিত মানুষ নেই? মানুষ আসলে একবারও ভাবে না, এই মেয়েটা সাত বছর কাজ করে তবেই স্বপ্নটা দেখছে। আমি সাতটা বছর ঘাম ছুটিয়ে কাজ করেছি। প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছি। এসব মানুষ দেখে না। এটাই দুঃখ।'
তিনি জানান, ১৫ মে তে আমেরিকায় বসছে মিস ইউনিভার্সের চূড়ান্ত আসর। আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য তিনি যাবেন সাত দিন আগেই। সেখানে বিশ্বের প্রায় ৯০ টি দেশের সুন্দরীরা লড়বেন সেরা হওয়ার লড়াইয়ে। বাংলাদেশ থেকে অংশ নেবেন মিথিলা। এই প্রতিযোগিতার জন্য তিনি নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, 'আমি আসলে ওখানে বিজয়ী হওয়ার জন্যই যাবো। এটা আমার জন্য অনেক বড় দায়িত্ব। এখন মনে হচ্ছে, আমি একজন পাবলিক ফিগার'।
মিথিলা গত বছর অভিনয় করেছিলেন বলিউডের 'রোহিঙ্গা' নামের একটা মুভিতে। খুব দ্রুতই এটি নেটফ্লিক্সে ও আই মুভিতে দেখা যাবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশের দুটি মুভিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন সম্প্রতি।
তবে এসব ছাপিয়ে মিথিলা স্বপ্ন দেখেন হলিউডে কাজ করার। তিনি বলেন, 'আমি আসলে হলিউডে কাজ করতে চাই। বাংলাদেশের একটা মেয়ে হলিউডে কাজ করছে এটা ভাবতেই ভালো লাগে। আমি ধীরে ধীরে সেই স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি।'