মার্কিন আব্রামস ট্যাংকের প্রথম চালান ইউক্রেনে
ইউক্রেনকে প্রথমবারের মতো নিজেদের তৈরি আব্রামস ট্যাংক সরবারাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল (সোমবার) প্রেসিডেন্ট ভদেদিমির জেলেনেস্কির পক্ষ থেকে এটি নিশ্চিত করা হয়েছে।
তবে ধারণা করা হচ্ছিলো যে, ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে হয়তো আরও কয়েক মাস পর ট্যাংকগুলো কিয়েভকে প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে এরও আগে সরবারাহ করার মাধ্যমে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের চলমান পাল্টা আক্রমণ আরও গতি পাবে মনে করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা জানান, আগামী মাসগুলোতে এম১ মডেলের আরও আব্রামস ট্যাংক ইউক্রেনকে পাঠানো হবে।
ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে কিয়েভকে মোট ৩১ টি ট্যাংক প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন। ঐ দুই কর্মকর্তা জানান, এরমধ্যে প্রথম চালানটি ইউক্রেনকে গত শনিবার পাঠানো হয়েছে।
যদিও প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলের ট্যাংকগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি। তবে মার্কিন কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, দুই প্লাটুন পরিমাণের ট্যাংক সরবারাহ করা হয়েছে। সংখ্যার হিসেবে যা আট থেকে দশটি।
ট্যাংকগুলো পেয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "আব্রামস ট্যাংকগুলো ইতিমধ্যেই ইউক্রেনে এসে পৌঁছেছে। আমাদের ব্রিগেডে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।"
রাশিয়ার দখলে চলে যাওয়া অঞ্চলগুলোতে ইউক্রেনের পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে ট্যাংকগুলো বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন সমর বিশ্লেষকেরা। তবে ইউক্রেন মিলিটারি ইনটিলিজেন্সের প্রধান কিরিলো বুদানভ বলেন, "আব্রামস ট্যাংকগুলো সুকৌশলে ও খুবই সুনির্দিষ্ট জায়গায় নিয়োগ করতে হবে। অন্যথায় এগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকবে।"
কিরিলো বুদানভ মনে করেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বেষ্টনীকে ধ্বংস করতে ট্যাংকগুলোকে ফ্রন্টলাইনে যুক্ত করলেই হবে না। তাহলে যুদ্ধক্ষেত্রে এটি খুব বেশিদিন টিকতে পারবে না। বরং বড় ধরণের অপারেশনে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে এগুলো ব্যবহার করতে হবে।
অন্যদিকে মার্কিন সাবেক সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তারা মনে করেন যে, আব্রামস ট্যাংকগুলোকে যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন করতে ইউক্রেনের কিছুটা সময় লাগবে। কেননা এটির জন্য সহায়ক জিনিসগুলো প্রস্তুত করতে হবে এবং সঠিক স্থান নির্ধারণ করতে হবে।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিনও অবশ্য খুব শীঘ্রই ইউক্রেনকে ট্যাংকগুলো সরবারাহের কথা জানিয়েছিল।
তবে প্রায় বছরখানেক আগে ইউক্রেনের মিত্ররা পশ্চিমা ট্যাংক ইউক্রেনকে সরবারাহের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিল। কেননা তাদের যুক্তি ছিল যে, এর ফলে ন্যাটো যুদ্ধে আরও প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে যেতে পারে। একইসাথে পুতিনের সাথে বিরোধ আরও স্পষ্ট হয়ে যেতে পারে।
বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ট্যাংকগুলো সরবারাহের কারণে ইউক্রেনের বাড়তি সুবিধাও হয়েছে। এতে করে জার্মানির তৈরি অত্যাধুনিক লেপার্ড ট্যাংক পাওয়ার সম্ভবনাও উজ্জ্বল হয়েছে। এছাড়াও ব্রিটেন ইতিমধ্যেই ইউক্রেনকে এই বসন্তে ১৪ টি চ্যালেঞ্জার ২ ট্যাংক দিয়েছে।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, জার্মানির বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালানোর জন্য তাদের অন্তত ৩০০ পশ্চিমা ট্যাংক প্রয়োজন।
তবে অস্ট্রিয়ার মিলিটারি একডেমির কর্নেল মার্কাস রেইসনার মতে, এখন পর্যন্ত মাত্র অর্ধেকের মতো ট্যাংক সংগ্রহ করতে পেরেছে দেশটি। অন্যদিকে ধারণা করা হচ্ছে যে, প্রতিপক্ষ রাশিয়া প্রতি বছর গড়ে প্রায় ২০০ টি ট্যাংক তৈরি করছে।