প্রবল হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় হামুন, ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি, সারা দেশে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ
সাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় 'হামুন'-এর কারণে পায়রা ও চট্টগ্রাম বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং মোংলা বন্দরকে ৫ নম্বর সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে নৌপথে সব নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
কাল সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ভোলার কাছে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে ঘূর্ণিঝড় হামুন।
এর প্রেক্ষিতে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নিজস্ব 'অ্যালার্ট ৩' জারিসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে অবস্থানরত ২২টি জাহাজকে গভীর সাগরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও এসব এলাকার আশেপাশের দ্বীপ এবং চরাঞ্চলে ৭ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় এলাকায় দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে খুব ভারী (৮৯ বা তার বেশি) বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
রাত ৮টার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার নির্দেশ
প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুন উপদ্রুত এলাকার দুর্গত মানুষদের আজ রাত আটটার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
তিনি বলেন, গতকাল সোমবার নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় হামুনে পরিণত হয়েছে। এটি চট্টগ্রাম এবং বরিশালের দিকে উত্তরপূর্ব অভিমুখে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে।
বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি পায়রা বন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করছে। এর বাতাসের গতিবেগ ৮৯ কিলোমিটার থেকে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে।
এ অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর সাত নম্বর বিপদসংকেত দিয়েছে। দুটি পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে।
"সাত নম্বর বিপদসংকেত দিলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে। সে অনুযায়ী, এই মুহূর্ত থেকে আমাদের মাঠ প্রশাসন এবং স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্গত লোকদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া শুরু করবে। ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ, গতিবেগ ও চরিত্র বিশ্লেষণ করে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
"আজ রাত ১০টা থেকে সকাল ১০টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলীয় অঞ্চল অতিক্রম করবে। সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে রাত আটটার মধ্যে যেন আশ্রয়কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের নিয়ে যাওয়া হয়," যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, "আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছি। আমাদের মাঠপ্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা সেখানে কাজ করছেন। সেখানে রান্না করা খাবার ও সুপেয় পানি, শিশুদের খাবার ও গবাদি পশুর গোখাদ্য দেওয়ার জন্য আমরা এরইমধ্যে অর্থ বরাদ্দ করেছি।"
তিনি জানান, প্রতি জেলায় ২০ লাখ টাকা, ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এক কোটি টাকা গোখাদ্য ও সমপরিমাণ টাকা শিশুখাদ্যের জন্য দেওয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আজকের সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও মাঠপর্যায়ের কর্মাকর্তারা কাজ করছেন।
"গতবছরের সিত্রাং ঘূর্ণিঝড় ও এবারের হামুনের গতিপথ একই ধরনের, যদিও এবারেরটা একটু উত্তর-পশ্চিম দিকে আছে। কিন্তু গতিপথ ও গতি অনেকটা একইরকম। যে কারণে একটু অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে," বলেন তিনি।