কোভিড-১৯: পিসিআর ল্যাবের সাথে বেড়েছে টেস্টের সংখ্যা
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে কম টেস্ট হওয়া নিয়ে অভিযোগ ছিল। সংক্রমণের শুরু থেকে বিশেষজ্ঞরা দিনে ২০ হাজার টেস্ট করার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। তারপরও গত বছরের জুন-জুলাই মাসে যখন করোনাভাইরাসের পিক-টাইম ছিলো তখনও দিনে ২০ হাজার টেস্ট হয় নাই। তবে এক বছরে পরিস্থিতি বদলে গেছে। এখন পিসিআর টেস্টের পাশাপাশি অ্যান্টিজেন, জিন এক্সপার্টের মাধ্যমে টেস্ট হয়। শুরুতে একটি ল্যাবে (আইইডিসিআর) পরীক্ষা হলেও এখন তা ২০০ ছাড়িয়েছে। এখন দিনে সর্বোচ্চ ২৭ হাজারের বেশি টেস্ট হচ্ছে। দিনে ৫০ হাজারের বেশি টেস্ট করার সক্ষমতা রয়েছে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আগে আমাদের সক্ষমতা কম থাকায় টেস্ট কম হতো। এখন ২২৪ টা পিসিআর ল্যাবে টেস্ট করা হয়। পাশাপাশি অ্যান্টিজেন ও জিন এক্সপার্টের মাধ্যমে টেস্টের ব্যবস্থা চলমান আছে। সরকারি-বেসরকারি সব ল্যাবে পুরোদমে টেস্ট করা হলে দিনে ৫০-৬০ লাখ টেস্ট করা সম্ভব হবে'।
এখন টেস্ট বাড়ার বিষয়ে ডা. আলমগীর বলেন, 'স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠানের কারণে টেস্টের পরিধি বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজারের বেশি টেস্ট করা হচ্ছে অনুষ্ঠান উপলক্ষে। এছাড়া এখন সংক্রমণ বাড়ায় রোগী বাড়ছে তাই টেস্টের পরিধিও বাড়ছে। আমরা চাই যাদের লক্ষণ দেখা দিবে তারা যেন টেস্ট করে। তাহলেই সংক্রমণ ছড়াবে কম'।
করোনা সংক্রমণের শুরুতে টেস্টিং কিট সংকট থাকলেও এখন কোন কিট সংকট নেই বলে জানিয়েছেন ডা. আলমগীর। তিনি বলেন, 'নতুন লকডাউনের কারণে কিট আমদানিতে সমস্যা হতো। কিট আমদানি চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত কিট আছে এবং যখনই প্রয়োজন হয় তখনই কিট চলে আসে। এছাড়া আমাদের ৬-৭ লাখ অ্যান্টিজেন টেস্ট করার সক্ষমতা আছে। তাই কিটের কারণে পরীক্ষা বন্ধ হবে এমন সংকট এখন আর নেই'।
শুক্রবার ২৭,২৯৯টি নমুনা পরীক্ষা করে এ বছরের সর্বোচ্চ ৩৭৩৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ২৩ মার্চ থেকে পরপর তিন দিন ২৭ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে প্রতিদিনই সাড়ে তিন হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এর আগে একদিনে সর্বোচ্চ রোগী ছিলো ২ জুলাই, ৪০১৯ জন। সেদিন টেস্ট হয়েছিলো ১৮,৩৬২ টি নমুনা। গত বছরের ২৬ জুন ১৮,৪৯৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়, সেটি ছিলো একদিনে সর্বোচ্চ নমুনা টেস্ট।
করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং দেশের অন্যতম শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'এখন দিনে ২৫ হাজারের বেশি টেস্ট করা হচ্ছে, তার মানে আমাদের টেস্টের সক্ষমতা রয়েছে। এটিকে বজায় রাখতে হবে। এখন রোগী বাড়ছে- বেশি বেশি টেস্ট করে তাদের কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন করা গেলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৭৩৭ জনের দেহে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫ লাখ ৮৮ হাজার ১৩২ এ।
এছাড়া ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও সপ্তাহজুড়ে ওঠানামা করছে। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত ১ বছরে কোভিডজনিত কারণে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮ হাজার ৮৩০।
গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার ছিল ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও মৃত্যুহার ছিল ১ দশমিক ৫০ শতাংশ।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সে বছরের ১৮ মার্চ।