এডিপি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন: টাকার বিরাট চাপ, সময় অতি অল্প
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে ব্যয় করেছে মাত্র ৯৬,৯৭৫.৪ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের মাত্র ৪৬.৩৪ শতাংশ।
২০৯,২৭২ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন করতে হলে চলতি ও আগামী মাসে আরও ১১২,২৯৬.৬ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে, যা অসম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আইএমইডির তথ্য পর্যালোচনায় দেখো গেছে, সংস্থাটি ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে মাসভিত্তিক এডিপি পর্যালোচনার তথ্য প্রকাশ করে আসছে। এই এক যুগের বেশি সময়ে প্রথম ১০ মাসে কোনো বছরই এত বেশি অর্থ অব্যয়িত থাকেনি।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত অর্থবছর করোনার প্রকোপের মধ্যেও এপ্রিল পর্যন্ত ৪৯ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এর হার ছিল ৫২ শতাংশ।
২০১০-১১ থেকে শুরু করে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতি বছর ৫৬ থেকে ৫৮ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল প্রথম ১০ মাসে।
পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, অর্থবছরের শুরুতে মোট ২১৪,৬১১ কোটি টাকার এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছিল, বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে যা ২০৯,২৭২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলছেন, সংশোধিত এডিপির সাধারণত ৮৫ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। এবার হয়তো করোনার কারণে বান্তবায়ন কিছুটা কম হবে।
তিনি বলেন, 'বাস্তবায়ন হার বাড়তি দেখানোর জন্য হয়তো শেষের দিকে দ্রুত কিছু কাজ করা হবে। এ ধরনের কাজে গুণগত মান নিশ্চিত হয় না। সরকারের অর্থের বড় অপচয় হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'বছরের শেষের দিকে ব্যয় বেশি দেখাতে কিছু অর্থ ছাড় দেওয়া হয়ে থাকে। পরের অর্থবছরের শুরুতে কাজ করে এসব বিলের সমন্বয় করা হয়ে থাকে। এসব কাজেরও গুণগত মান নিশ্চিত হয় না।'
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এ বিষয়ে বলেন, 'আগামী কয়েক বছর ধরে কোন মন্ত্রণালয়ের কত বাজেট থাকবে তা সুনির্দিষ্ট থাকে। ব্যয়েও অগ্রাধিকার চিহ্নিত থাকে। এ অবস্থায় বছরের শুরুতে কাজ ফেলে রাখার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।'
তিনি বলেন, 'বছরের শেষের দিকে একই ব্যক্তি আর একই প্রতিষ্ঠান এডিপির কাজ কারে থাকেন। তখন তারা কীভাবে এত দ্রুত কাজ করেন, এ প্রশ্নটা উঠতেই পারে।' আন্তরিক হলে তারা শুরুতেই কাজের গতি আনতে পারেন বলে মনে করেন তিনি।
ড. ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, 'এমন নয় যে, শেষের দিকে কর্মীদের দক্ষতা বেড়ে যায়, বা নতুন কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। সব কিছু আগের মতোই থাকলে এডিপির গতি বাড়বে কেন?'
শুরুতে কাজ ফেলে রাখার যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, 'শেষের দিকে এক সাথে অনেক কাজের বিল জমা পরলে তা যথাযথভাবে যাচাই করা সম্ভব হয় না। ফলে সহজে ছাড় হওয়ার যোগ্য নয়, এমন বিলও তখন ছাড় হয়ে যায়।'
তিনি আরও বলেন, 'শেষের দিকে মাঠ পর্যায়ে সব কাজও যাচাই-বাছাই করা যায় না। ফলে নিম্নমানের কাজের বিল উঠিয়ে নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে মানুষের করের টাকার অপচয় হয়। আর এ ধরনের অবকাঠামোর সুফলও পাওয়া যায় না। উল্টো এসব অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে বাড়তি অর্থ ব্যয় হয়।'
এডিপির আওতায় ব্যয় ত্বরান্বিত করার পরিবর্তে উল্টো এবার বেশ কিছু খাতে হ্রাস টেনে ধরা হয়েছে। বিদেশ সফর, প্রশিক্ষণ, সেমিনার, গাড়ি কেনা বাবদ বরাদ্দ বন্ধ রাখা হয়েছিল। সর্বশেষ সরকারের কৃচ্ছ সাধনের অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাইরে সব মন্ত্রণালয়ের নতুন চুক্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।