ধীরগতিতে চলছে বিভাগীয় পর্যায়ের ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প
আট বিভাগীয় শহরের মেডিকেল কলেজে পৃথক পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্পের কাজ চলছে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত এতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৬.৮৩ কোটি টাকা। ২৩৮৮.৪০ কোটি টাকা ব্যয় ধরে নেওয়া প্রকল্পে দুই বছর দুই মাসে অগ্রগতি ০.২৯ শতাংশের কম।
ধীরগতির প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সিরিজ বৈঠকের অংশ হিসেবে আয়োজন করা একটি সভায় এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
সভায় বলা হয়েছে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে আট হাসপাতাল নির্মাণ শেষ হলে ক্যান্সার চিকিৎসায় আরও ৮০০ শয্যা যোগ হওয়ার পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার ওপর চাপ কমে আসত। সারা দেশে শুরুতেই রোগ শনাক্তের কারণে ক্যান্সারে মৃত্যুহার কমে আসার পাশাপাশি চিকিৎসার ব্যয়ও কমে আসত।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খুলনা মেডিকেল কলেজ ও রাজধানীর কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল প্রাঙ্গনে এখনও ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের জায়গা নির্বাচন সম্পন্ন হয়নি। অপর ছয় বিভাগের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পটির পরিচালক জানান, কার্যাদেশ দেওয়া ছয়টি প্যাকেজের কাজের প্রস্ততি শুরু হয়েছে। শীঘ্রই প্রকল্পের দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রকল্প বাস্তবায়নকালের দুই বছরের বেশি পেরিয়ে গেলেও মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু না হওয়ায় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। আগামী ১০ মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও সভায় জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধিরা।
অবশিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের উপ প্রধান ড. মোহাম্মদ আমজাদে হোসেন।
এ কর্মপরিকল্পনা নিয়মিতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি এবং প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় পর্যালোচনারও সুপারিশ করেন তিনি।
দ্রুত কাজ শেষ করতে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে এমন ছয় হাসপাতালের কর্মপরিকল্পনা দ্রুত আইএমইডিতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয় সভায়।
সভায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব খন্দকার মোহাম্মদ আলী জানান, "ইতোমধ্যে কয়েকটি ধীরগতির প্রকল্প চিহ্নিত করে সার্বক্ষণিক নিবিড় পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে বিভাগের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি প্রকল্পটির গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে বলেও তিনি জানান।"
জানা যায়, ২০১৬ সালের অক্টোবরে "ঢাকা সিএমএইচ-এ ক্যান্সার সেন্টার নির্মাণ" প্রকল্প অনুমোদনের সময় দেশের প্রতিটি বিভাগে একটি করে ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুরুতেই ক্যান্সার নির্ণয়, চিকিৎসা সম্প্রসারণ ও বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ঢাকার রাজধানীর ওপর চাপ কমানো, চিকিৎসায় বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ও চিকিৎসায় জনগণের ব্যয়ভার কমানোর লক্ষ্যে প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পাঁচ বছর পরেও কাগজে কলমেই রয়ে গেছে আট ক্যান্সার হাসপাতাল।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, বাংলাদেশে নারীদের মৃত্যুর ঘটনায় ৭.৭ শতাংশের জন্য দায়ী বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার। আর পুরষদের মৃত্যুতে ক্যান্সারের দায় ৬.৪ শতাংশ। দেশে বয়ষ্ক মানুষের মৃত্যুর কারণে ক্যান্সারের অবস্থান চতুর্থ হলেও এক থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর শীর্ষ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিবিএস।
জানতে চাইলে আইএমইডির সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে দেশের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোকজন দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছেন। আবার সারা দেশে ক্যান্সারের চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় সবার পক্ষে ঢাকায় এসে চিকিৎসা নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্প্রসারণ ও বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই।"
এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বেহাল অগ্রগতিতে হতাশা প্রকাশ করে সচিব বলেন, "বেশ কিছু প্রকল্পের মেয়াদকাল শেষ হয়ে আসলেও কাজে অগ্রগতি হয়নি। এ সব প্রকল্পের গতি বাড়াতে আইএমইডির পক্ষ থেকে বিশেষ সভার আয়োজন করা হচ্ছে। এ সব সভার নির্দেশনা মানা হলে হাসপাতালটি নির্মাণে গতি আসবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক ডা. এফএম মুসা আল মনসুর জানান, "২০১৯ সালের জুলাই থেকে প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল দেখানো হলেও তা একনেকে অনুমোদন পেয়েছে তিন মাস পর সেপ্টেম্বরে। আর প্রশাসনিক অনুমোদনের পর প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ হয়েছে ২০২০ সালের মার্চে। এ হিসাবে প্রথম ৯ মাস কোনো কাজই শুরু করা যায়নি।"
এরপর স্থান নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মেডিকেল কলেজসমূহের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। স্থান নির্বাচন ছাড়াও নকশা প্রণয়ন, টেন্ডার আহ্বানসহ বিভিন্ন কারণে বাড়তি সময় লেগেছে। করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে বলেও তিনি জানান।