ঢাবিতে চান্স পেয়েও ভর্তি হননি আকিব, স্বপ্ন ছিল বড় ডাক্তার হবার
কুমিল্লা জিলা স্কুলের তুখোড় ছাত্র ছিলেন মাহাদি আকিব তনয়। জিলা স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি ভর্তি হন নটরডেম কলেজে। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর পরীক্ষা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে। দুটোতেই উত্তীর্ণ হন।
আকিবের মামা ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, আকিবরা দুই ভাই। একজন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। আকিব গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মেডিকেলে কলেজে চান্স পান। তার বাবা কুমিল্লা জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক গোলাম ফারুক মজুমদার আকিবের সিদ্ধান্তের ওপর সব ছেড়ে দেন। আকিব পরিবারকে জানায়, সে বড় ডাক্তার হবে, তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে না। পরিবার তার দাবি মেনে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করায়।
তিনি বলেন, "ও সারাদিন পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মেডিকেলে পড়াশোনায় ভালো করতে হলে নাকি হলে থাকতে হবে, তাই হলে ওঠার ব্যবস্থা করা হয়। হলের বাইরে থেকে মেডিকেলে পড়ানো ব্যয়সাপেক্ষ। তার বাবার স্বল্প আয়ে বাইরে রেখে পড়াশোনা করানোও অসম্ভব।"
সেই হলে ওঠাটাই কাল হলো আকিবের জন্য। শনিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারিতে গুরুতর আহত হন তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভারী আঘাতে তাঁর মাথার খুলি থেঁতলে গেছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাকে হাসপাতালটির আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: 'হাড় নেই, চাপ দেবেন না': আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে আকিব
চমেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান এস এম নোমান খালেদ চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ভারী আঘাতে মাহাদির মাথার হাড় ভেঙে গেছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে ব্রেইনও ড্যামেজ হয়েছে। এই অবস্থায় অপারেশন করে মাথার হাড়ের একটা অংশ খুলে আপাতত তার পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়েছে। কিছুটা উন্নতি হলে সেটা আবার আগের জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হবে।"
আহত আকিবের একটি ছবি ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পুরো মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ মোড়ানো। ব্যান্ডেজে লেখা 'হাড় নেই, চাপ দেবেন না'।
আকিবের মামা দেলোয়ার জানান, "আকিব পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সে নিরীহ প্রকৃতির। তার কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই। তারপরও দুটি গ্রুপের রাজনৈতিক কোন্দলে বলি হয়েছে সে।"
আরও পড়ুন: ছাত্রলীগের মারামারির পর বন্ধ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
আকিবের মা নার্গিস আক্তার গৃহিণী। তাদের বাড়ি কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার কিং বামিশা গ্রামে।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, "হল খোলার আগে বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করছিলো আমার ভাগ্নে। সপ্তাহখানেক আগে হলে ওঠে সে। যাওয়ার আগে আমার বোনকে বলে, আমার যেতে ভালো লাগছে না মা। তখন দুলাভাই বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাকে চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেয়।"
আকিবের বাবা গোলাম ফারুক মজুমদার কুমিল্লা জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "স্কুল শিক্ষক হিসেবে স্বল্প আয়ে সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছি। তাদের কখনো অভাব বোধ করতে দেইনি। নিজ সন্তানকে এভাবে আইসিইউতে শুয়ে থাকতে দেখা কত কষ্টের তা শুধু একজন বাবাই জানেন।"